Your one-stop destination to discover everything Indian that is happening on the Internet

ভালোবাসাময় হোক সবার জীবন

ঘড়ির কাটায় ঠিক সকাল ১০ টা বাজে তখন । রাতুল এখনও বিছানায় । কাল ১৪ই ফেব্রুয়ারি বলে রাতে ঠিক করে রেখেছে কক্সবাজারে এবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবসটি উদযাপন করবে । মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙল রাতুলের । মাকে সব খুলে বলল সে। সাবধানে থাকার কথা বলে মা ও যাবার অনুমতি দিয়ে দিলেন । রাতুল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ­ ছাত্র। কথা-বার্তা আর চালচলন দেখলেই নিঃসন্দেহে বলা যায় একজন পারফেক্ট স্মার্ট ছেলে। ১৪ই ফেব্রুয়ারি ।কাল রাতেই কক্সবাজারে আসে রাতুল। আজ কেন জানি খুব ইচ্ছে করছে রাতুলের সমুদ্র সৈকত দেখতে। নাস্তা শেষ করেই রওয়ানা দিল রাতুল। বালুময় রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছে। রাস্তাটা সৈকতের ঠিক পাশেই। ঠাণ্ডা বাতাস বইছে যা চুলগুলোকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। যেন নিঃসঙ্গতার পাশে একটু সময়ের জন্যসঙ্গি হয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে তাকে। নিজেরই অজান্তে কখন যে রাতুল শিষ বাজানো শুরু করেছে তা সে নিজেও বলতে পারবেনা। রাতুল কিন্তু খুব ভালো শিষ বাজাতে পারে। শিষটা থামাতেই পেছন থেকে আওয়াজ আসে- " বাহ, আপনি তো বেশ ভালোশিষ বাজাতে পারেন " কথাটা শোনার পর পেছনদিকে তাকাতেইএক মেয়েকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখে সে অবাক হয়। সূর্যের আলো মেয়েটার মুখে পরছে অপূর্ব লাগছে তাকে। কিছুটা বিব্রত বোধ করল রাতুল। মেয়েটা তার এই অবস্থা দেখে তখনও মুচকি হাসছে। হঠাৎ আবার বলে উঠলো, " আমি সামিয়া। এখানেই থাকি। আর আপনি? " হা করে তাকিয়ে আছে এখনো। হঠাৎ মুখ থেকে একটি কথাই বের হল " রাতুল " " অহ রাতুল। সুন্দর নাম। ইয়ে মানে,ওভাবে হয়তো হঠাৎ করে আপনার সাথে কথা বলা উচিতহয়নি। আসলে এখানে সবাই জুটি আর দূর থেকেদেখছিলাম আপনি একা হাঁটছেন আর যতই কাছে আসছিলাম আপনার শিষের ধ্বনি বাতাসে ভেসে আসছিল। তাই কৌতুহল হল। তা আছে নাকি আপনার এমন কোন স্বপ্নমানবী যার জন্যে আনমনে এমন মধুর শিষ বাজাচ্ছিলেন?" বলেই হেসে ফেললো সামিয়া। হতভম্ব ভাবটা তখনও কাটেনি। এই প্রথম কারো কথাগুলো রাতুলের মনটাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে । " না মানে! এরকম কেউ আজো আসেনি আমার জীবনে "-বলল রাতুল। " ও আচ্ছা । আপনি কি বিরক্তবোধ করছেন? " - জানতে চাইলো সামিয়া। " জী, না। মানে একটু..." কথাটা শুনে আবারো খিলখিল করে হেসে ফেললো সামিয়া। হাসি একটু কমতেই বলল " আপনি ভাবছেন আমি আবার কেমন মেয়ে! এতো কথা যেচে এসে জিজ্ঞেস করছি কেন!! আসলে আমি এমনই! " একটু নীরবতার পর আবার সামিয়া বলে উঠলো "চলুন একটু হাঁটা যাক। কি যাবেন? নাকি সমস্যা আছে? " " না! কোনো সমস্যা নেই। চলুন "- বললরাতুল। সৈকতের বালুময় হাঁটতে লাগলো দুজন। সামিয়ার পরনে ছিল নীল রঙের শাড়ি। মাঝে মাঝে রাতুল সামিয়াকে দেখছিলআর ওর কথাবার্তায় শুধু মুগ্ধ হচ্ছিলো। তারপর কয়েকমাস কেটে গেল। ততক্ষণেমন দেয়া নেয়ার পর্ব শুরু হয়ে গেছে। রাতুলের হৃদয়ে সামিয়ার জন্যে আলাদা একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। কক্সবাজার থেকে আসার পর ফেসবুক আর ফোনের মাধ্যমেই তাদের যোগাযোগহতো। রাতুল ঠিক করল সামিয়ার সাথে দেখা করবে। দুজন আবারো সৈকতেই দেখা করলো যেহেতু সামিয়াদের বাসা কক্সবাজারেই। সন্ধায় হাঁটতে হাঁটতে সামিয়াকে প্রপোজ করা। সামিয়া প্রথমে মুচকি হাসে তার পরেরটা কি আর বলা লাগে? একটি মেয়ের এই মুচকি হাসির আড়ালে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুতো থাকতে পারে না। ভালোবাসার এই পবিত্র বাঁধনের মধ্য দিয়ে ৬ বছর পার করে দিল রাতুল আর সামিয়া। ৬ মাসে একবার দেখা হতো আর খুব কমই কথা হতো। তাই বলে ওদের ভালোবাসা বিন্দু মাত্র কমেনি। আজ সামিয়ার জন্যে অনেক আনন্দের দিন। বলার আগেই বুঝে যাবার কথা যেকেন আনন্দের দিন? হ্যাঁ! আজ সামিয়ার বিয়ে। রাতুলের সঙ্গে। ৬ বছরের এই উত্তাল প্রেম পূর্ণতা পেতে চলেছে। প্রকৃতিও যেন হেসে তাদের এই সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিচ্ছে। রাতুলের ভাবতেই আশ্চর্য লাগছে। দিনটাকে রঙিন মনে হচ্ছে, হাওয়ায় হাওয়ায় ভালোবাসার জয়ধ্বনি ভেসে আসছে। এককথায় একটি সাধারন প্রেমের কাহিনী সফল হলো যার মাত্রাটা অসাধারণের চেয়েও বেশি।
Share:

Pageviews

Blog Archive